কে কোথায় নিভে গেছে তার গুপ্ত কাহিনী জানি।
নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোন পঙতি আর
মনে নেই গোধূলিতে; ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই।
অথবা গৃহের থেকে ভুলে বহির্গত কোনো শিশু
হারিয়ে গেছে পথে, জানেনা সে নিজের ঠিকানা
[সন্তপ্ত কুসুম ফোটেঃ বিনয় মজুমদার]
নিজের অন্তর দেখি, কবিতার কোন পঙতি আর
মনে নেই গোধূলিতে; ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই।
অথবা গৃহের থেকে ভুলে বহির্গত কোনো শিশু
হারিয়ে গেছে পথে, জানেনা সে নিজের ঠিকানা
[সন্তপ্ত কুসুম ফোটেঃ বিনয় মজুমদার]
(উৎসর্গঃ- প্রিয় শিমুল, আনোয়ার সাদাত শিমুল'কে- যে একদিন বড় হয়ে, আরো বড় গল্পকার হবে)
১.
২.
আইস ক্রীম পার্লারের ঠান্ডায় হাসানের ঘুম পায়। থুতনীতে হাত ঠেকিয়ে বলে-কোথায় বেড়াতে যাবে? এই শহরে নিঃশ্বাস নেয়ার মতো কোন জায়গা খুঁজে পাইনা আমি
চৈতী জানায় শহরের ঠিক অদূরেই নাকি একটা বিনোদন পার্ক হয়েছে। পার্কের ভেতরে পাহাড় আছে। পাহাড়ের নির্জনতায় ছোট ছোট কুটির। চাইলে সারাদিনের জন্য ভাড়া নেয়া যায়। শহরের সব প্রেমিক প্রেমিকেরা নাকি পয়সা খরচ করে প্রেম করতে ভীড় করছে ঐসব ভাড়াটে কুটিরে।
তারপর ক’মুহুর্তে শীতাতপ যন্ত্রের একটানা আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দ থাকেনা।হাসান টেবিলে আঁকিবুকি কাটে। চৈতীই ফের কথা বলে
হাসান কথা বলেনা। বিরক্ত হয়। চৈতীকে আগে ও বলেছে, তবু কি এক অদ্ভূত কারনে এই প্রশ্ন সে বার বার করে। অথৈ’র বাবা ফয়সাল কখনোই ওর বন্ধু ছিলোনা। সহকর্মী মাত্র। হাসান যখন অফিসে জয়েন করে ফয়সাল তখন মাত্র ক’দিন হয় বিয়ে করেছে প্রেম করে। দু পরিবারেরই অসম্মতিতে।সে দুপুরের লাঞ্চ নিয়ে আসতো বাসা থেকে। হাসানকে জোর করে খাওয়াতো। একদিনের জন্য ও সে হাসানকে বাইরে লাঞ্চ করতে দেয়নি। বাসায় নিয়ে গেছে। ওর বৌ নীলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে, নীলার তখন বাচ্চা হবে। বাচ্চা হবার সময় প্রচুর রক্তপাত হলো, কাকতালীয় ভাবে রক্তের গ্রুপ মিলে গেলো হাসানের সাথে। হাসান রক্ত দিলো। বছর খানেক পর অফিসের এক প্রোগ্রামে আমেরিকা গিয়ে যখন ফয়সাল আর ফিরলোনা নীলা তখন হাসানকেই জানালো এটা তাদের পুর্ব পরিকল্পিত, আর্থিক দৈন্যদশা মেটানোর নাকি আর কোন পথ ছিলোনা।
চৈতী হাসানের চুলে হাত ছোঁয়ায়। বলে- ‘আমার কিন্তু ভালো লাগে, এই যে একটা বাচ্চার জন্য তোমার এতো কেয়ার।তুমি খুব ভালো বাবা হবে, আমার চিন্তা নেই’
প্রায় নির্জন আইসক্রীম পার্লারে চৈতী আরো ঘন হয়ে আসে, ঘন হয়ে আসে ওর চুলের ঘ্রান।
তারপর আর তেমন কথা এগোয়না। সমস্ত সুঘ্রান নিয়ে মেয়েটা চলে যাওয়ার পর ‘একা’ শব্দটা বড় ভারী ও তপ্ত হয়ে উঠে হাসানের জন্য।হিমহিম আইস ক্রীম পার্লারে ফিরে আসে সকালের হাসফাস, অসুখের ঘ্রান।
ক’বছর আগে কলেজের বন্ধু এন্টনীর সাথে ও বেড়াতে গিয়েছিলো খাসিয়া পল্লীতে। এন্টনীর দাদী থুত্থুড়ে বুড়ি নাকি হাত দেখে ভবিষ্যত বলে। কৌতুহলে সে ও বসেছিল বুড়ির পাশে। হাত ধরে রেখে দীর্ঘক্ষন, ফিসফিসিয়ে বুড়ি বলেছিল-‘ তোর তো শরীর ভরা অসুখ রে ব্যাটা!’
শরীর ভরা অসুখ নিয়ে গ্লাসডোরে ঠেলে বেরিয়ে আসে হাসান।
৩.
ফুটপাত বলে কিছু নাই। মানুষের শরীরের উপর দিয়ে গড়িয়ে হাঁটছে মানুষ। ছুটছে আরেকদল। আরেকদিক থেকে হর্ণ বাজাতে বাজাতে চলে গেলো পুলিশের গাড়ী। কেউ একজন চিৎকার করে বললো-শহরের প্রধান বিপণীতে আগুন লেগেছে। বেশ উঁচুতে আগুনের শিখা। অনে দূর থেকে তার হল্কা এসে ধাক্কা দিলো।
হাসানের শরীর জ্বলছে। কাল ফেরার আগে পিঠে নখের আঁচড় বসিয়ে দিয়েছিলো নীলা।সারা রাত জ্বলেছে, এখন জ্বলছে আবার ।
দৌড়ের ভেতর অসুখের ঘ্রান পায় হাসান অথবা অসুখের ঘ্রান নিয়েই দৌড়ায়। দৌড়ায় অথচ চোখ খুলতে পারেনা, চোখ খুলে তাকাতে পারেনা। যেনো চোখের ভেতরে মুঠো মুঠো বালি ঠেসে দেয়া। কড়কড়ে অস্বস্তি।