Monday, September 25, 2006

একটি কল্পদৃশ্য অথবা নিছক মৃত্যু

”...এসব জটিলতাই ঘূণ পোকা আমার।... মানুষ হিসেবে জম্ম নিয়ে মানুষ হয়ে বেঁচে থাকতে না পারার কষ্ট যে কি ভীষণ! কেন যে আমার কিছুই ভালো লাগে না! না নারী, না কাব্য, না চকচমকে ক্যারিয়ার... কিচ্ছু না! স্বপ্ন আর বাস্তবতার অসহ্য বৈপরীত্য আমাকে ভাঙে। কেবলই... নিজের ভেতর...”

ডায়েরির পাতা জুড়ে এভাবেই একজন সাজিয়েছিল নিজেকে এলোমেলো । এখন নেই।
লাশ হয়ে গেছে কাল রাতে। সাদা কাফনে মুড়ে শুইয়ে রাখা হয়েছে সামনের উঠোনে। কালো গেট ঠেলে আসছে অনেকেই। জানা- অজানা, চেনা-অচেনা।

কে মন্ত্রণা দিয়েছিল ওকে এই সর্বনাশের? জীবনানন্দ না কায়েস আহমেদ, নাকি মায়াকোভস্কি-আত্নহননের নিপুণ শিল্পী? ২১টা সোনেরিল মুখে দেবার সময় করো কথা বুঝি মনে পড়েনি! মনে পড়েনি মাকে? যিনি ঈশ্বর ছিলেন ওর কাছে! অথবা আমাদের কাউকে? যারা বন্ধু ছিলাম...!

লাশটাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদছে অপালা, ক্লাসের সবথেকে শান্ত মেয়েটা। এই লাশ একদিন অপালাকে বলতে চেয়েছিল ’--- তুমি কি আমার জন্য প্রতীক্ষা করবে? ’ কেন জানি বলা হয়নি। অথবা কি বলা হয়েছিল? নারী অধিকার নিয়ে ভীষণ সোচ্চার লীনা। খুব খুনসুঁটি হতো এসব নিয়ে। নয়নের কাঁধে মাথা রেখে লীনা এখন কাঁদছে। আর প্রতীতি! সবচেয়ে উচ্ছল মেয়েটা নির্বাক বসে আছে মুখ ঢেকে। ওর বুঝি সেই চিঠিটার কথা মনে পড়ছে যেখানে এই লাশ একদিন লিখেছিল ’---তুই আমার ওয়েসিস হবি? ভীষণ ক্লান্ত আমি। একটু ছায়া দিবি আমাকে? '

এসব একান্ত কিছু যে জানা ছিল আমার।প্রথম যেদিন বিতর্ক আর আবৃত্তি দিয়ে কাঁপিয়েছিল কলেজ অডিটরিয়াম- পাশে ছিলাম, প্রথম যেদিন গাঁজা খেয়ে চিৎকার করেছিল- ’নষ্ট হয়ে গেলাম!’ .. পাশে ছিলাম । প্রথম যেদিন একটু ছুঁয়ে দেখতে চেয়েছিল প্রতীতিকে, সেই নিজস্ব দিনেও তো পাশে ছিলাম।

আর আজ প্রথম যখন লাশ হয়ে গেলো, প্রথম যখন প্রবেশ করবে অনন্ত অন্ধকারে, তখন কি পাশে থাকবো না আমি?
আমার যে ভীষণ জানতে ইচ্ছে করছে ওই আত্নঘাতী কষ্টের স্বরূপ। নাকি এ কষ্ট অচেনা ছিল তার নিজের কাছেই? ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সব দেখি। লাশটাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গোসল দিতে। অন্তর্গত রক্তে আমার বিপন্ন ক্লান্তি। ঘুমোতে ইচ্ছে করে। ভীষণ। অনন্ত নিদ্রা। তন্দ্রার ভেতর আমাকে হাতছানি দেয় ২১টা সোনেরিল।


[ সম্ভবতঃ ১৯৯৬ এর কোন একদিন লেখা]

1 comment:

Anonymous said...

আগেও পড়েছিলাম সম্ভবত সামহোয়্যারে। এখন আবার পড়লাম। এক কথায় অসাধারণ! কী করে লেখেন এমন সব লেখা- আজিব!