Tuesday, May 05, 2009

রুচিরা ও হাওয়ার নাবিকগন

১.
‘কৃষ্ণচুড়া বিরহে উড়ে রাধাচুড়া চৈত্রের ধূলো
কোন শোকে পাতা ঝরে
ঝরে আমার বিষণ্ণতাগুলো ...’


আজ আবার আমাদের হাওয়ায় ভাসার রাত। এর আগে শেষবার আমরা হাওয়ায় ভেসেছিলাম বছর দুয়েক আগে। তখন আমরা আরো সবুজ, আরো নরম ছিলাম। আর নরম ছিলাম বলেই হয়তো সে সময় আমাদের সবার খুব চেষ্টা থাকত নিজেদের খুব শক্ত দেখাতে।
সে জন্য আমরা চোয়াল শক্ত করে শ্লোগান দিতাম, রাগী রাগী চেহারা করে ক্যাম্পাসে মহড়া দিতাম আর অন্য সবাইকে ভাবতাম আমাদের প্রতিপক্ষ । আমাদের কারো কাছে সত্যি সত্যি দু’একটা নিরীহ চেহারারঅস্ত্র থাকত। মাঝে মাঝে এগুলো উঁচিয়ে সত্যি সত্যিই কাদের যেন আমরা তাড়া করতাম।

সেই তখন, তখন আমাদের অনেক বন্ধু ছিল এবং অনেক শত্রু ছিল। আমরা সব বন্ধু এবং শত্রুদের কেউ কেউ এক হয়েছিলাম বছর দুয়েক আগের সেউ সন্ধ্যা য়। দিন তারিখ মনে নেই তবে মনে আছে- সে সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ ছিল না। দু’একটা তারা জ্বলবে কি জ্বলবেনা ঠিক সিদ্ধান্তে আসতে পারছিল না। আমরা গোল হয়ে বসে ছিলাম রিপন-কে ঘিরে।

বসেছিলাম ওদেরই দু’তলার ছাদে। ছাদে তখন বাতি ছিল না। বেশ দূরে স্ট্রীট লাইটের আলো এবং টুং টাং গীটার। রাসেল তখনো গীটার বাজানো ছেড়ে দেয়নি। শফিক খুব মনোযোগ দিয়ে মসলা বানাচ্ছিল। এখনো ওর মত চমৎকার মসলা কেউ বানাতে পারে না। তখন আমরা ওকে এম.ডি. ডাকতাম- ‘মাষ্টার অব ড্রাগস’।

এম.ডি. প্রথম স্টিকটা তুলে দিয়েছিল রিপনের হাতে। তারপর এক দম এক দম করে প্রত্যেকে। সে সময় বেশ তাড়াতাড়ি আমাদের ‘হাওয়া-যাত্রা’ শুরু হয়ে যেত। সবাই-ই যখন ভাসছিলাম সে সময় ছাদের সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠে এসেছিল মঞ্জুর।
...তারপর অনেক রাতে বিদায় নিয়ে যখন ফিরছি কেউ কাঁদিনি। কেবল মঞ্জুর হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল রিপনকে জড়িয়ে ধরে। আমরা অবাক হয়েছিলাম অথবা আমাদের কারোরই তখন কোন বোধ ছিল না। কেবল আমার মনে পড়েছিল মাত্র ক’দিন আগে মঞ্জুর এল.জি. লোড করেছিল রিপনকে শুট করবে বলে।

পরদিন রিপন চলে গেল লন্ডন। মঞ্জুর ও গেল... আরো ক’দিন পর। রিপনে র ঠিকানা জানি। ২২ আগষ্ট ওকে কার্ড পাঠাই। মাঝে মধ্যে খুব ইচ্ছে হয় কিন্তু মঞ্জুরকে কিছু পাঠাতে পারিনা;
...ওর ঠিকানায় পৃথিবীর কোন ডাক পিয়ন পৌঁছাতে পারেনা ।


২.
‘সে মেয়ে সহজে
দু’ডানার ধুলোবালি ঝেড়ে ফেলে তোমাকেই খোঁজে
শুধু তার পাখি চোখ ভিজে উঠে সবুজ শিশিরে...’


আমরা তখন সংখ্যায় অনেক ছিলাম।
তারপর; এই অনেকের মধ্যে আমরা ক’জন- আমরা পাঁচজন ধীরে ধীরে বদলাতে লাগলাম। মিছিলে, মহড়ায়, হাওয়ায় আড্ডায় আমাদের ক্রমশঃ অনুপস্থিতি। আমরা নিজেদেরকে বদলাতে লাগলাম অথবা একজন আমাদের বদলাতে লাগলো।
সে হল রুচিরা। হঠাৎ করে কিভাবে যেনও আমাদের পাঁচজনের বন্ধু হয়ে গেল। তারপর আমাদেরকে বদলাতে লাগল। তাও নিঃশব্দে নয়, সশব্দে এবং প্রকাশ্যে । ওর সাথে বন্ধুত্ব রাখতে হলে নিয়মিত ক্লাশ করতে হবে- আমরা ক্লাশে শে হাজির ; রুচিরা চমৎকার ইংরেজী বলে, আমরা ভর্তি হলাম স্পোকেন ইংলিশের ক্লাসে। রুচিরা’র শখ হল কম্পিউটার শিখবে। ওর সাথে আমরাও একটা কম্পিউটার ইনস্টিটিউটে । কিসের আর কম্পিউটার শিখা। বরং আমরাি কম্পিউটারকে শিখাই আড্ডার যাবতীয় রকম সকম।

রুচিরা বোধ হয় জয়ীতা হবার স্বপ্ন দেখত। কিন্তু ও কখনো আমাদেরকে আনন্দ, সুদীপ কিংবা কল্যাণ হতে বলেনি। হয়তো বুঝতে পারতঃ আমাদেরকে দিযে ওসব হবে না। আশেপাশে কেউ কেউ প্রেম করত। আমরা হাসি-ঠাট্টা , বিদ্রুপ করতাম পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিক প্রেমিকাদের নিয়ে; ‘আশার আলো’ রেন্ডুরেন্টে তিনকাপ চা ছয়জনের জন্য ভাগ করতে করতে রুচিরা বলেছিল- ‘তোদের জন্য এ জীবনে আমার আর প্রেম করা হলোনা’। সম্ভবতঃ আসিফ জিজ্ঞেস করেছিল 'কেন?' এ চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলেছিল- ‘কেন আবার? যে মেয়ে পাঁচ পাঁচটা ছেলের সাথে ঘুরে বেড়ায় তার সাথে প্রেম করবে কে?’

এ বছর পহেলা জানুয়ারি আমরা ছ’জন মিলে বেশ একটা নির্জন চা বাগানে গেলাম। বাগানের ভেতর একটা চমৎকার লেক। লেকের জলে অসম্ভব সুন্দর নীল শাপলা। রুচিরা অবশ্য বলেছিল নীলপদ্ম । এরকম নীল শাপলা অথবা নীলপদ্ম আমি দেখিনি এর আগে। সে নাকি দেখেছে। জিজ্ঞে স করেছিলাম- ‘কোথায় দেখেছিস?’ ও বলেছিল- ‘স্বপ্নে। আমার নীল স্বপ্নে। আমার অনেক রংয়ের স্বপ্ন আছে , লাল স্বপ্ন, নীল স্বপ্ন। তোদের নিয়েও আমার একটা স্বপ্ন আছে। স্বপ্নটার রং হল...'

সেদিন আর স্বপ্নটার রং জানা হয়নি। আমরা একটা নৌকা পেয়ে গেলাম এবং নৌকা নিয়ে ঘুরলাম অনেক বেলা। টুকটাক অনেক কথা ও বলেছিল।
-যদি এখন নৌকা ডুবে যায়! আমি সাঁতার জানিনা যে,
পুলক বলেছিল- -কিচ্ছু হবে না আমি খুব ভালো সাঁতার জানি। তোকে ডুবতেই দেবোনা।
-আচ্ছা ধর, হঠাৎ ডাকাত এসে যদি আমাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়
আমি বলেছিলাম - কিযে বলিস তুই! আমরা বেঁচে থাকতে কেউ তোকে ছিনিয়ে নিতে পারবেনা।
- আর যদি আমার বিয়ে হয়ে যায়!


৩.
ঝিনুক নীরবে সহো, নিরবে সহে যাও
বুকে নিয়ে বালির বিষ, নিরবে মুক্তো ফলাও...’

আজ রুচিরার বিয়ে ছিল। আজ আমাদের বন্ধুর বিয়ে ছিল।
আমরা শেষ আড্ডা দিয়েছিলাম সাতদিন আগে ‘আশার আলো’য়। ঐদিন আমরা ছ’জন ছ’কাপ চায়ের অর্ডার দিয়েছিলাম। আমরা খুব মজা করতে চাচ্ছিলাম রুচিরাকে ঘিরে। আবীর আবার কোত্থেকে সাতটা লাল গোলাপ এনে দিয়েছিল রুচিরার হাতে- ‘অভিনন্দন বন্ধু !’
রুচিরা হেসেছিল। খুব হেসেছিল। হাসতে হাসতে হঠাৎ ডুকরে কেঁদে উঠেছিল। দু’হাতে মুখ ঢেকে রুচিরা কাঁদছিল। আমরা খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলাম, আমার ভীষণ ইচ্ছে হচ্ছিল ওর মাথায় হাত রাখি। এমনিতে কতদিনই তো এমন করেছি। অথচ ঐদিন কিছুতেই হাত উঠছিলনা। কি একটা অস্বস্তি। কেউই আমরা বুঝতে পারছিলাম না কি করা উচিত। বুঝে উঠতে পারছিলাম না রুচিরার কান্নার রহস্য । ওরতো কোন প্রেম ছিল না। তবু কান্না কেন?
ওর সাথে আমাদের আর কথা হতে পারেনি। ও চলে গিয়েছিল। যাবার আগে বলেছিল- ‘আমার বিয়েতে তোরা কেউ যাবিনা!’

তবু আজ দুপুরে গিয়েছিলাম আমরা পাঁচজন। যখন কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকছি ঠিক তখন মাইক্রোতে করে রুচিরাকে নিয়ে আসা হল পার্লার থেকে। ওকে কোনদিন তেমন করে সাজতে দেখিনি। মাইক্রো’র দরজা খুলে যখন ওকে নামানো হচ্ছে আমাদের পাঁচ জোড়া চোখ থমকে গেল, বিস্মিত হল। যেন আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না এই আশ্চর্য্য সুন্দর মেয়েটা আমাদের বন্ধু!
রুচিরা চোখ তুলে তাকায়নি তবু মনে হল যেন ও আমাদের দেখেছে। বর এল কিছুক্ষন পর। লম্বা চওড়া সুপুরুষ। তবু ব্যাখ্যাতীত কোন এক কারণে বরকে আমাদের কারোই ভাল লাগল না। বরকে দেখার পর পরই কেন জানি আমরা প্রত্যেকে কুঁকড়ে যেতে থাকলাম নিজেদের ভেতর। কিন্তু কেউ কারো কাছে ধরা দিতে চাইলাম না। খেতে বসলাম। কেউই খেতে পারলাম না। মনে হচ্ছিল যেন একটা প্রচন্ড বিরক্তি গ্রাস করছে আমাদের প্রত্যেককে।

কেউ কারো সাথে বলার মতো কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমাদের কেউই তো হাবাগোবা গোবেচারা নই। দু'বছর আগেও লাল পাউডার আর এসিড মিশিয়ে ঝটপট ককটেল বানাতাম। এখনো পাঁচজন এক সাথে দাঁড়ালে...। তবুও নিজেদেরকে খুব অপাংক্তেয় মনে হচ্ছিল ঐ জমজমাট আসরে। আমরা বেরিয়ে আসছিলাম নিঃশব্দে । গেটের কাছে চলে এসেছি। এসময় খুব সাজগোজ করা একটা মেয়ে এসে দাঁড়াল আমাদের সামনে। তারপর আমাকে বলল- ‘রুচিরা আপনাকে ডাকছে’।


৪.
‘কে আর অমন কাক ডাকা ভোরে একা ফিরে আসে
আমি ফিরে আসি, আমি ফিরে আসি...একা!’


যেন দু’বছর আগের সেই সন্ধ্যা।
আজও আকাশে চাঁদ নেই। আজও তারাদের দ্বিধা। আমরা বসে আছি একটা টিলার উপর। আমাকে ঘিরে আমার চার বন্ধু । পুলক, আসিফ, আবীর, রাসেল। যে প্রশ্ন এরই মধ্যে কয়েকবার করা হয়ে গেছে, সে প্রশ্ন ওরা আবারো করল আমাকে। আমি অসহায় হয়ে হাতজোড় করে বললাম- ‘বিশ্বাস কর ভুলে গেছি। রুচিরা কি বলেছে, আমি মনে করতে পারছিনা।’
তারপর; আবারো নিঃস্তব্দতা। আসিফ মসলা বানাচ্ছে। আমার ড্রাগমাষ্টার শফিকের কথা মনে পড়ছে। অস্ত্র মামলায় সাত বছরের জন্য ও জেলে। ওর বদলে আমরা যে কেউ থাকতে পারতাম-যদি না ঐ জীবন থেকে আমরা পাঁচজন পালিয়ে আসতাম।

এবার আমরা গোল হয়ে বসি। আসিফ প্রথম স্টিক আমার হাতে তুলে দেয়। আগুন ধরাই। চোখ বন্ধ করি। কপালে দু’হাত ঠেকাই। প্রথমে ছোট করে, তারপর লম্বা এক টানে ধোঁয়া নিয়ে যাই ফুসফুসে, কিছুক্ষন আটকে রাখি তারপর ঠেলে পাঠাই মস্তিস্কে । কিছু বেরিয়ে যায় নিঃশ্বাসের সাথে। স্টিকটা পাচার করি বামে আবীর হাতে।
এবার কল্পনায় সেই পাখীটাকে ডাকি। দু’বছর আগে প্রতি সন্ধ্যায় ফুসফুসে ধোঁয়া ভরে আমি যে পাখী হয়ে যেতাম। গাংচিল, সোনালী ডানার শঙ্খচিল অথবা ঈগল। ওরকম কোন পাখী আমি সত্যি সত্যি আমি দেখিনি কোনদিন। তবু সে আসত আমার ভাবনায়। তার ডানায় রোদের ছায়া, গলায় অদ্ভুত নীল রং আর চোখে রাজ্যের নিঃসঙ্গতা। আমি সেই পাখী হয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠতাম। অনেক উঁচু উঁচু পাহাড়। পাহাড়ের চুড়োয় মেঘেরাও উঠতে পারে না। মেঘের ভেসে বেড়ায় পাহাড়ের বুকে। আমি মেঘের ভেতরে ঢুকতাম তখন, দুডানায় জলের ছোঁয়া নিয়ে উঠে যেতাম উপরে, অনেক উপরে। কিন্তু কোনদিনই আমি পাহাড়ের চুড়ো পেরুতে পারিনি।

চারহাত ঘুরে স্টি্ক আবার আসে। আবার প্রণাম করি। পাখীটা এবার অবয়ব নেয়া শুরু করে। আমি সমস্ত আমাকে প্রবেশ করাই তার ভেতরে। এরপর শুরু করি দুডানায় ভর করে আমার অন্তরীক্ষ যাত্রা । খুব দরদী গলায় কে যেন গেয়ে উঠে- ‘আমার হইলোনাতো সুখের মিলন/হইলোনা শুকসারী দর্শন/এমনই কপাল’...-হয়তো আসিফ গাইছে। তবু মনে হচ্ছে দূরে, অনেক দূরে কোথাও কে যেন কাঁদছে। কে যেন ডাকছে। কে যেন কি বলছে আমাকে।
পাহাড় দেখছি এবার। পাহাড়ের মেঘ দেখছি। আমর দু’ডানা ভিজে যাচ্ছে, আজ আমি উপরে উঠব। অনেক উপরে। আজ পেরুবো সকল চুড়ো। ডানায় ক্লান্তি নামে। পাহাড় চুড়োয় যেন কার ছায়া। কে যেন বসে এখানে।

মঞ্জুর! আমাদের বন্ধু মঞ্জুর!। যে মঞ্জুর গুলি খেয়ে মারা গেল। যে মঞ্জুর মারা না গেলে মারা যেতাম আমাদের যে কেউ।
সেই রাতে ফিরছিলাম এই পাঁচজন আর মঞ্জুর। এ রকম এক জোৎস্না শূন্য রাতে হঠাৎ যখন ওরা হিট করল আমরা দিশেহারা হয়ে গেলাম। আমাদের কাছে কিছু ছিল না। আর আমরা টলছিলাম। কেবল মঞ্জুর কাছে একটা এল.জি ছিল এবং সে ঘুরে দাড়াল। এই সুযোগে পালালাম আমরা পাঁচজন। পরদিন হাসপাতালে সবার সাথে আমরাও মঞ্জু্রের লাশ দেখেছি। অথচ কাউকে কিচ্ছু বলিনি। বলিনি যে, আমরাও সাথে ছিলাম। মৃত্যু আমাদের তাড়া করছিল তখনো। এরপরই ঐ জীবন থেকে আমাদের প্রত্যাবর্তন অথবা পলায়ন।

পাহাড় চূড়োয় মঞ্জুরকে দেখে আমার প্রমিথিউসের কথা মনে পড়ে যায়। রুচিরা আমাকে প্রমিথিউসের গল্প শুনিয়েছিল। মানুষকে আগুন এনে দেয়ার অপরাধে তাকে নাকি আটকে রাখা হয়েছে কোন পাহাড়ের চূড়োয়। এই কি সেই পাহাড়? এই কি তবে প্র মিথিউস? কিন্তু ওর মুখে যে বন্দীত্বের কোন ছাপ নেই কেবল বিজয়ীর আভা। বরং আমিই সমস্ত ক্লান্তি নিয়ে বসে পড়ি ওর পায়ের কাছে। ও খুব নরম করে আমাকে বলে
- কিরে বেঁচে থাকতে কেমন লাগে?
আমি আরো ক্লান্ত হয়ে যাই। আরো অপরাধী হয়ে বলি;
- ‘ক্ষমা করে দে দোস্ত । তোর মতো আমাদের সাহস ছিল না মরে যাওয়ার’
মঞ্জুর হাসে।
- 'যারা মরতে জানেনা, তারা মৃত্যুর হাত থেকে ফেরাতেও জানেনা কাউকে’।

আমি বুঝিনা ওর কথা, আমি আবার পালাই। পেছনে হাসির শব্দ । বিদ্রুপের অথবা করুণার। আমি তবু উপরে উঠতে থাকি। আজ আমি সীমানা পেরুবই। আমার নিঃশ্বাসে শূন্যতা, মাথার ভেতর অনুরনণ- আমরা মরতে পারিনা, আমরা কারো মৃত্যু ঠেকাতেও পারিনা। কার মৃত্যু? আর কে মারা যাবে? আমার নিঃশাস বন্ধ হতে থাকে। ফুসফুস ব্যাকুল হয়ে উঠে।একফোঁটা নিঃশ্বসের জ্ন্য। সারা শরীর ভারী হয়ে আসে। আমার পতন হতে থাকে দ্রুত। নামছি দ্রত নামছি।
হঠাৎ আছড়ে পড়ি শক্ত মাটিতে। আমার ডানা ভেঙ্গে যায়। অসম্ভব ব্যথা। ব্যথা মানুষের স্মৃতি হরণ করে।ব্যথা মানুষের স্মৃতি ফিরিয়ে দেয়। মনে পড়ে। হঠাৎ আমার সবকিছু মনে পড়ে যায়। দুপায়ের উপর ভর করে উঠে দাঁড়াই। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করে উঠি-
‘রুচিরা মারা যাবে। আমাদের কাপুরুষতার মুখে থুথু ছিটিয়ে রুচিরা মারা যাবে আজ রাতে। '

[মঞ্জুর... সত্যি আমাদের একজন ছিল। মঞ্জুর মারা গেল আগষ্ট ’৯৪-তে। সেই বেহিসেবী সময়ের অংশীদাররা কেউ ভুলিনি ওকে। ]


[ সহবাস- এর কোন এক সংখ্যার জন্য লিখেছিলাম '৯৮ এ]

No comments: